পোষ্য কোটা নিয়ে কথা বলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চারটি সংগঠন।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাবি অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র উপাচার্য বরাবর প্রদান করা হয়েছে। এর অনুলিপি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকেও দেওয়া হয়েছে। এতে সালাহউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে অফিসার সমিতির উদ্যোগে রাবি সহায়ক কর্মচারী সমিতি, পরিবহন টেকনিক্যাল সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়নের সমন্বয়ে একটি জরুরি সভা হয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গত শুক্রবার ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র সালাহউদ্দিন আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে অশালীন, অশ্লীল ও কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ করেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার, মানহানীকর ও অসম্মানের। বিধায় শিষ্টাচার বহির্ভূত এহেন বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি, সহায়ক কর্মচারী সমিতি, পরিবহন টেকনিক্যাল সমিতি, সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে।
সেখানে আরও জানানো হয়, ‘ওই সভায় সকল সমিতির পক্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতিকে বক্তব্য দানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পত্র প্রদানের পর দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অফিসার সমিতি, অন্যান্য সমিতি ও ইউনিয়নের যৌথ সভায় পরবর্তীতে কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।’
সালাহউদ্দিন আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে। এরপর সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই কোটা বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দেন। তা না হলে অনশন কর্মসূচিতে বসবেন বলে ঘোষণা দেন। এছাড়া ফেসবুকে লাইভে এসেও তিনি এ ব্যাপারে কথা বলেন।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তিতে কোটা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য গত শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোহা. মাঈন উদ্দীনকে সভাপতি করে ২০ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গঠন করেছেন উপাচার্য।
সালাহউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রসঙ্গে রাবি অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘সালাউদ্দিন আম্মার তার একটি ফেসবুক ভিডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের হিজড়া বলেছেন, যা একটি শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। তিনি আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত দিয়েছেন। এর প্রতিবাদস্বরূপ ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন করেছি। তিনি যদি এর সমাধান দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাবি-এর সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার জানান, আমার বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। এই অযৌক্তিক কোটা এবারই বাতিল করতে হবে। আমার বক্তব্যটা ছিল প্রতীকী অর্থে এমন যে, যদি ওনাদের সন্তানেরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, মানসিক প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অথবা তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে থাকে তাহলে তাদের কোটা দিতে আমাদের সমস্যা থাকবে না, তারা এটা স্বীকার করতে হবে। তারা এমন কথায় লজ্জিত হয়েও যদি এই পোষ্য কোটা থেকে বেরিয়ে আসে তবে সেখানেই স্বার্থকতা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০% শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কিন্তু এই কোটার সুবিধা নিচ্ছে না। তাহলে সামান্য কিছু ব্যক্তির জন্য সবাই কেন এই বদনাম বয়ে বেড়াবে?"