পবা উপজেলার হিমাগারটি থেকে রাজশাহী শহরের কাঁচাবাজারের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। ওই হিমাগার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার নির্ধারিত আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৯ টাকা। সেই আলু রাজশাহীর কাঁচাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র যোগসাজশে আলুর দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, সরকার পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও হিমাগারমালিক ও ব্যবসায়ীরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে আলু মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। তাঁরা বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করছেন।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন গত রবি ও গতকাল মঙ্গলবার দুটি হিমাগারে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৬০৬ বস্তা আলু নির্ধারিত দামে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। তখন কতিপয় লোকজন এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলুর বাজারে কয়েক দফা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলমান অস্থিরতা ঠেকাতে সম্প্রতি পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। মজুত করা আলু ৩০ নভেম্বরের পর হিমাগারে রাখা যাবে না, এমন আদেশও দিয়েছে সরকার। কিন্তু পবার কয়েকটি হিমাগার নির্ধারিত সময়ের পরও বিপুল পরিমাণ আলু মজুত করে রেখেছিল।
গত রোববার সন্ধ্যায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান পবার নওহাটা পৌর এলাকার আলাইবিদিরপুর এলাকার আমান কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ৬০ কেজির ৩০৬ বস্তা আলু খোলাবাজারে ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি দেন। এই টাকা আলুর মালিককে দেওয়া হয়। এরপর একই এলাকার রহমান ব্রাদার্স কোল্ড স্টোরেজে অভিযান চালানো হয়। তখন হিমাগারের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। ওই সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান ঘোষণা দিয়ে আসেন, মঙ্গলবার আবার অভিযান চালানো হবে।
গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ওই হিমাগারে ২ হাজার ২০০ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। কিছুক্ষণ পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহরাব হোসেন অভিযান চালিয়ে হিমাগার থেকে ২ হাজার ৩০০ বস্তা আলু জব্দ করেন।
খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আলুর ক্রেতারা এসে আলু কেনার জন্য ভিড় করতে থাকেন। এ সময় মোহনপুর উপজেলার নন্দনহাটি এলাকার রাশেদুল হক নামের একজন ব্যবসায়ী এসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে রাশেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এই হিমাগারে তাঁর ১২ হাজার বস্তা আলু ছিল। সর্বশেষ ১ হাজার ৫০০ বস্তা অবশিষ্ট ছিল। এগুলো ৩৪ টাকা কেজি দরে কেনা ছিল। ৪৫ টাকা কেজিতে খরচ পড়েছে। তিনি ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এর আগে হিমাগারে আলু রেখে লোকসানে পড়েছিলাম। জমি বিক্রি করে হিমাগারের ভাড়া শোধ করেছি। তখন তো কেউ দেখেনি।
ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, তাঁদের দায়িত্ব হিমাগারের মজুত খালি করে দেওয়া। তাঁরা যাঁদের কাছে আলু বিক্রি করেছেন, তাঁদের ফোন নম্বর রেখে দিয়েছেন। এই আলু ভোক্তাদের কাছে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। যেখানে আলু বিক্রি হবে, সেখানে তদারকি করবেন, এ পর্যন্ত তাঁদের দায়িত্ব নয়। তারপরও তাঁরা এটি করবেন।
রাজশাহী জেলায় ৪৩টি হিমাগার আছে। এতে সংরক্ষণ বা মজুত করা যায় প্রায় ৮৫ লাখ বস্তা আলু। প্রতি বস্তায় আলু থাকে ৬০–৬৫ কেজি। এখনো অনেক হিমাগারে আলু মজুত আছে। পর্যায়ক্রমে সব হিমাগার পরিদর্শনের কথা বলছে প্রশাসন। এই আলু খুচরা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। গতকাল রাজশাহী শহরে বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পুরোনো আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ৮০–১০০ টাকা কেজি।