বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে শহরের সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।
সেখান থেকে মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে যান তারা। ওই চত্বরে স্থাপিত শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিবের প্রতিকৃতি এবং ম্যুরালের স্থাপনায় ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধরা। গত ৫ আগস্ট এসব ম্যুরাল থেকে ছবি মুছে দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আদলে তৈরি করা হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কার্যালয়। চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কের পৌরসভার মোড়ে প্রায় দুই শতক জায়গার উপর নির্মানাধীন এ ভবনে ছিল আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। পাঁচতলা ভবন বিশিষ্ট এ কার্যালয়ে কমন স্পেস, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অফিস কক্ষ, কনফারেন্স রুমসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বসার স্থান নির্ধারিত ছিল। ভবনটির সামনেই নির্মিত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ৮ ফুট উচ্চতা ও ৬ ফুট প্রস্থের বিশাল আকৃতির মুর্যাল। প্রথম তলার বেইজমেন্টে বিশাল জায়গাজুড়ে করা হয় হলরুম। যা কমন স্পেস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২য় তলায় নির্মিত হয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের পৃথক অফিস কক্ষ। ৩য় তলার পুরো কম্পাউন্ডজুড়ে করা হয় বিশাল কনফারেন্স রুম। আওয়ামী রাজনৈতিক মহলে ৬৪ জেলার দৃষ্টান্তস্থাপনকারী হিসেবে এই ভবন পরিচিত লাভ করেছিল।
তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর সেখানে ভাঙচুরের পর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সবশেষ বুধবার চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মোড়ের জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের ওই ভবনটি ক্রেন এনে ভাঙচুর করা হয়। ভবনের সামনে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি ক্রেন দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙা হয় প্রবেশ গেটসহ বেশ কিছু অংশ।
এছাড়া ভবনের ভেতরে ঢুকে শেখ হাসিনা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়াদ্দারের ছবিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের ছবি ও অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা পরে তারা সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ও জেলা পরিষদ চত্বরে যান।
এ সময়, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’, ‘দিলি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘জনে জনে খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা গেছে।
ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাফফাতুল ইসলাম বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের মুজিব ম্যুরালের কবর রচনা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক বলেন, শেখ হাসিনা দেশব্যাপী যে ফ্যাসিবাদী চিহ্ন রেখে গেছে, আমরা তা নিশ্চিহ্ন করতে এখানে একত্র হয়েছি। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে, যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।