বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েত এ রাতের আঁধারে হানা, লুটপাট।
কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের মূল গেটের তালা ভেঙে একদল দুর্বৃত্ত ভেতরে ঢুকে বেশ কয়েকটি কর্মকর্তার রুমে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ৮-১০টি কক্ষ থেকে কী কী মালামাল খোয়া গেছে তা গুরুত্বের সাথেই কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করছেন।
তবে দূতাবাসের কাউন্সিলর লেবার ও দূতালয় প্রধান মো: মনিরুজ্জামান তার রুম থেকে শুধু দুটি সানগ্লাসই খোয়া যাওয়ার দাবি করলেও তিনি এখনই এ ঘটনাটি কেবল চুরির ঘটনা বলতে নারাজ।
৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে কুয়েত মিসিলায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের তালা ভেঙে দূবৃত্তদল ভেতরে প্রবেশ করে এবং নিরাপদে বের হয়ে যায়। কুয়েত পুলিশ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের কল্যাণ সহকারী মো: তৌহিদ হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। তবে দূতাবাসের পুরো ঘটনাটি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, সেখানে আগতদের চোর না বলে দুর্বৃত্ত শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।
কুয়েত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশী ও দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা গতকাল জানান, ৬ তারিখ মধ্যরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পেছনের ছোট গেটের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢোকে। এই সময় দূতাবাসের নিরাপত্তায় কেউ দায়িত্বে ছিলেন না। ওই দুর্বৃত্তরা দূতাবাসের কাউন্সিলর ও দূতালয় প্রধান মো: মনিরুজ্জামানের কক্ষ সহ, অফিসারদের ৮-১০টি কক্ষের তালা ভেঙ্গে কাগজপত্র এবং ব্যক্তিগত জিনিস তছনছ করে। দীর্ঘ সময় দূতাবাসে অবস্থানের পর দুর্বৃত্তরা আবার ওই গেট দিয়েই বের হয়ে চলে যায়। পর দিন সকালে অফিসে যাওয়ার পর কর্মকর্তারা চুরির বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে সিসি ক্যামেরা দেখে চোর আসা এবং যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
গতকাল সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময়) দিকে কাউন্সিলর মো: মনিরুজ্জমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দূতাবাসের দুটি পকেট গেটের একটির তালা ভেঙে একজন লোকের ভেতরে প্রবেশ করার কথা স্বীকার করে বলেন, ওই ব্যক্তি আমার কক্ষসহ মোট ৮-১০টি কর্মকর্তার কক্ষের তালা ভেঙেছে। এর মধ্যে আমার রুম থেকে দুটি সানগ্লাস খোয়া গেছে। এ ছাড়া আর কিছুই খোয়া যায়নি বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এই ঘটনার পর কুয়েত পুলিশের ক্রাইম সিন, সিআইডিসহ মোট চারটি সংস্থা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এটাকে চুরিও বলতে পারছি না, আবার ডাকাতিও বলতে পারছি না, যে কারণে আমরা ঢাকায় যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি সেখানে আগতকে দুর্বৃত্ত বলে উল্লেখ করেছি।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আগত ব্যক্তির বর্ণনা দিয়ে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সিসি ক্যামেরায় একজন ব্যক্তিকেই ঘটনার সময় দেখতে পেয়েছি। বয়স কত হবে তা ধারণা করতে পারছি না। তবে তার মুখে মাঙ্কি ক্যাপ, মাস্ক লাগানো ছিল। পরনে ছিল ট্রাউজার। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাসে মোট ছয়টি গেট রয়েছে। সামনের দিকে চারটি আর পেছনে দুটি। এখন পকেট গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে এক ব্যক্তি এক সাথে ৮-১০ জন অফিসারের কক্ষের তালা একে একে ভাঙল। এখন তার কী উদ্দেশ্য ছিল তা অবশ্যই খুঁজে বের করতে এখানকার পুলিশ তদন্ত করছে।
কুয়েতের আইনশৃঙ্খলা কিন্তু অনেক কঠিন। তাই তদন্তের আগেই আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারছি না বলে জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দূতাবাসের যে সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে, তিনি দিনে ডিউটি করেন। তার নাম সোহেল রানা। রাতে কেউ ডিউটিতে থাকে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তালা ভেঙে একজন আসুক আর বেশি লোক আসুক আমরা চুরিও বলবো না, ডাকাতিও বলবো না। আমরা দুর্বৃত্তই বলবো। অনুপ্রবেশ বলবো। কেনো, কী উদ্দেশ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল সেটিই এখন জানার বিষয়। পুলিশের তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলেন ঐ কর্মকর্তা।
তথ্য সুত্র: নয়াদিগন্ত।