সোমবার   ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪   ৯  পৌষ  ১৪৩১


তারেক রহমানের শেষ ধাক্কায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেঃআমীর খসরু

Mohammad Obaidullah Chowdhury

Updated 24-Nov-09 /   |   চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি   Read : 53
আমীর খসরু
আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আপনাদের মনে আছে, লাখ লাখ মানুষ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে, আমাদের বিভাগীয় শহরে সবকিছু উপেক্ষা করে জীবনের বিনিময়ে তারা সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ঢাকাতে গুলি করে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল আওয়ামীলীগ। শেখ হাসিনার সেই আশা তারেক রহমানের নেতৃত্বের গুণের কারণে সফল হয়নি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সেই পটভূমি সৃষ্টি না হতো, সেই অবস্থা সৃষ্টি না হতো তাহলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না। এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে।

১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার, তখন তো তোমাদের এসব গল্প দেখিনি। তোমাদের ছিল কেউ, আমাদের সঙ্গে তো তখন কেউ আসেনি।তিনি শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকালে নগরীর কাজীর দেউরী আলমাস সিনেমা মোড়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত র‌্যালীপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর আলমাস সিনেমার সামনে থেকে র‌্যালী শুরু হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবিলী রোড়, তিন পুলের মাথা, হয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, উত্তর জেলা বিএনপির সি, যুগ্ম আহবায়ক এম এ হালিম।আমীর খসরু বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার সহযোগিতায়, সক্রীয় অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মানুষ জিয়াউর রহমান সাহেবকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে এক নতুন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে ৭ নভেম্বর। শেখ মুজিবুর রহমান, বাঁকশাল, আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। শহীদ জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। সেই বাংলাদেশ হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের বাংলাদেশ, স্বাধীনতার বাংলাদেশের, আইনের শাসনের বাংলাদেশ, জীবনের নিরাপত্তার বাংলাদেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম মাথা উচু করার বাংলাদেশ। সেই ধারা অব্যাহত রেখে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে স্বৈরাচারদের পতন ঘটিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচারদের বিদায় করে আবারো শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে। আবারো বাংলাদেশে মুক্তবাজার উন্মুক্ত হয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্যোক্তারা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ফেলেছিল। যেই অর্থনীতির ভিত্তি জিয়াউর রহমান সৃষ্টি করেছিলেন, সেই অর্থনীতির ভিত্তিকে আরো শক্তিশালী করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

আমীর খসরু বলেন, ১/১১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ যখন কিছু লোকের মাধ্যমে মানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে, বিএনপিকে সেদিন তারা পরাজিত করেছিল। পরবর্তীতে ওই স্বৈরাচারকে আবারো ক্ষমতায় বসিয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে, বিএনপির সাত লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, জেলহত্যা, পুলিশের হেফাজতে হত্যা, এর মাধ্যমে সেদিন বাংলাদেশে আবারো একটি নিরাপত্তাহীন জনগণের জন্য পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিল। সেখানে আবারো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিল। রুখে দাঁড়ানোর কারণে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এরপরের আন্দোলন এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সমস্ত দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। ছাত্র জনতা, সর্বস্তরের মানুষকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আমরা শেখ হাসিনাকে মোটামুটি পরাস্ত করতে পেরেছিলাম।তিনি বলেন, যেই আন্দোলনকে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশ একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরিয়ে আনুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিতাহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা বুঝবে না, জনগণের কষ্ট বুঝবে না। কারণ বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, জনগণের পাশে থাকতে হবে, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে। বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না, সেটা বুঝতে হবে, দু’বেলা খেতে পারছে না সেটা বুঝতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান একটা বয়ান দিয়ে কিছুদিন স্বৈরাচারী রাষ্ট্র চালিয়েছে। সেটা থাকে নাই। জনগণের সামর্থ্য ছাড়া কিছু ঠিকে থাকে না। পরবর্তীতে হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ আরেক বয়ান দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তাকে আমরা পরাজিত করে পাঠিয়ে দিয়েছি।

আমীর খসরু বলেন, এখন আবার আরেক বয়ান। এই বয়ানের অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে তা এ বয়ানের মধ্যে নেই। বাংলাদেশের জনগণ কবে ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করবে সেই বয়ান নেই। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হবে সেই বয়ান নেই। বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান। আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন। ৬ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কারণ, আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে আমরা দিয়েছি। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই একটি নতুন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওই সংস্কারে সবকিছু আছে। কিছু বাকি নেই। আপনারা যা বলেছেন, তাও আছে, তার বাইরে আছে। সংস্কারে আপনাদের চেয়ে আরো বেশি আছে।তিনি বলেন, যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো সহসাত করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। এবং যে সংস্কারে ঐক্যমত হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা সিদ্ধান্ত নিবে, সরকার সিদ্ধান্ত নিবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারো কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে। আগে তো এক দফা ছিল না। কেন এক দফা জানেন? আমরা বলেছি, এক দফার মাধ্যমে শেখ হাসিনার যদি পতন না হয় তাহলে আপনারা যত দফা দিবেন কোনো দফা কাজে আসবে না। তারপর আপনারা এক দফায় আসছেন, আমরা সবাই ঝাপিয়ে পড়েছি। আর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এটাই সত্য, এটা বুঝুন।আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান সাহেব বলেছেন, এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তাদের আমরা সমর্থন দিব, তাদের আমরা শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিব। আমরা এ সরকারকে যখন আসা মাত্রই সমর্থন দিয়েছি, এ সরকারকে আমরা এখনো সমর্থন দিচ্ছি। আমরা চাই এ সরকার গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। তার জন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, ফ্যাসিস্টরা উঁকিঝুঁকি মারছে, এই ঐক্য ভাঙা যাবে না। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট থাকতে হবে। অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশ-বিদেশে এখনো সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। গণ অভ্যুত্থানে পরাজিত গণধিকৃত স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বিএনপির নেতাকর্মী সহ দেশপ্রেমিক জনতাকে সজাগ থাকতে হবে।

অতিদ্রুত জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার যতো তাড়াতাড়ি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিবে ততই আপামর জনসাধারণের কল্যাণের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত হবে। চট্টলার রাজপথে আজকের এই বিশাল সমাবেশ মিছিল কোন শো-ডাউন নয়, বরং অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি বিএনপির অকুণ্ঠ সমর্থনের পাশাপাশি পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারির অংশ।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চসিক মেয়র ডাঃ শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম প্রমুখ।সমাবেশ শেষে এক বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালী শুর হয়ে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড়, নুর আহমেদ সড়ক, এনায়েত বাজার মোড়, জুবলি রোড, তিনপুলের মাথা, আমতলা মোড় হয়ে নগরীর কেন্দ্রস্থল নিউমার্কেটে স্বাধীনতা চত্বরে এসে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ’র সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।