দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় এক শিক্ষককে বরখাস্ত করায় ইউএনও ফজলে এলাহীকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতারা।
এ সময় সড়ক অবরোধে পঞ্চগড়-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
ইউএনওকে অপসারণের দাবিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। পরে বেলা দুইটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাসিবুল হাসান।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বীরগঞ্জ শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের, কমিটির আহ্বায়ক লিটন চৌধুরী, জগদল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল হক। এ সময় উপজেলা বিএনপির নেতা–কর্মীরাও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে নানা স্লোগান দেন এবং তাঁর অনিয়ম–দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
মানববন্ধনে জগদল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে পদাধিকার বলে উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচারণ ও হয়রানি শুরু করেছেন। সম্প্রতি চৌধুরীহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওবার নামে অর্থ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে ন্যূনতম সৌজন্য বজায় রাখেন না।
উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, এই ইউএনও আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করছেন। বালুমহাল, সার ডিলারদের কাছে অর্থগ্রহণ এবং আশ্রয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে আসছেন। কয়েকজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। আজকের শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলন দমন করতেও তিনি শিক্ষার্থীদের জড়ো করেছিলেন। পরে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে শিক্ষার্থীরা সরে যান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, যে শিক্ষককে বহালের দাবিতে আজ আন্দোলন হচ্ছে, তিনি দীর্ঘ প্রায় তিন মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। সরকার পতনের পরে তাঁকে সরিয়ে দিতে সেখানকার মানুষ বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন। প্রশাসন থেকে তাঁকে তিনটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যথাযথ আইন প্রক্রিয়া মেনে ওই শিক্ষকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা চেয়েছিলেন তাঁদের একক নেতৃত্বে সবকিছু চলবে। বিভিন্ন মেলায় যাত্রা বা জুয়া চালানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেসবের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিগত ১ বছর চার মাসে ১৮০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম করা হয়েছে। সুতরাং যাঁরা সামাজিক অপরাধ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ইউএনওতো চক্ষুশূল হবেই।
ইউএনওর বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাসিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, ‘একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেটির বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে যথাযথ আইনিব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।