হাইকোর্টের রায় বাতিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।
রবিবার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। এর ফলে দীর্ঘদিন পর আবারো রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেল জামায়াতে ইসলামী।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির জানান, “দীর্ঘ এক যুগের আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটলো। হাইকোর্টের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়ের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল। আজকের রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ সুগম হলো। আমরা আশা করি, এই রায়ের ফলে আগামী সংসদ হবে আরও প্রাণবন্ত ও সকল শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “আপিল বিভাগ আজ শুধু হাইকোর্টের রায় বাতিল করেনি, বরং নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। প্রতীকের বিষয়টিও কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ চাইছি, আশা করি আগামীকালই তা হাতে পাবো এবং তা ইসিতে দাখিল করবো।”
এর আগে, জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে দায়ের করা আপিলের শুনানি ১৪ মে শেষ হয় এবং রায় ঘোষণার জন্য ১ জুন নির্ধারিত হয়। জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন। শুনানির সময় আদালতে জামায়াতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়েরসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
২০২3 সালের ১ সেপ্টেম্বর জামায়াতের খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন চেম্বার আদালত। এরপর ১২ মার্চ শুনানি শুরু হয় এবং শেষ হয় মে মাসে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রিট নিষ্পত্তির মাধ্যমে জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলেও শুনানিতে মূল আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় ২০২3 সালের নভেম্বরে আপিল বিভাগ “ডিসমিস ফর ডিফল্ট” বলে আপিল খারিজ করে দেন। পরে জামায়াত সেই খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে এবং সর্বোচ্চ আদালত তা গ্রহণ করে।
শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত আবারো নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পেল।