সোমবার   ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪   ৯  পৌষ  ১৪৩১


রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আগাম জামিন শুনানির আবেদন নাকচ

MD. Sayem Uddin

Updated 24-Dec-11 /   |   স্টাফ রিপোর্টর   Read : 30
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানির অনুমতি চেয়ে করা আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার অবকাশকালীন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম এই আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলছেন, চিন্ময়ের পক্ষে আইনজীবীর ওকালতনামা না থাকায় আবেদন নাকচ করা হয়েছে।

গত ৩১ অক্টোবর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ফিরোজ খান নামের এক বিএনপি নেতা। পরে তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আদালত সূত্র জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আগামী বছরের ২ জানুয়ারি ধার্য রয়েছে। তবে আজ এ মামলার অন্য দুই আসামির জামিন শুনানির কথা ছিল। তবে আইনজীবী না আসায় সেই শুনানি হয়নি। এ অবস্থায় চিন্ময়ের জামিনের আগাম শুনানির জন্য আবেদন করেন রবীন্দ্র ঘোষ নামের এক আইনজীবী।

আগাম শুনানির আবেদনে বলা হয়, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি একজন সন্ন্যাসী। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা কারণে ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, চিন্ময়ের আগাম জামিন শুনানির আবেদন করা আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ কোনো ওকালতনামা দেননি তাঁর পক্ষে মামলা লড়ার। এ ছাড়া চিন্ময়ের আইনজীবী শুভাশীষ শর্মাও হাজির ছিলেন না। শুভাশীষ মামলা লড়ার জন্য রবীন্দ্র ঘোষকে লিখিত কিছু দেননি। পরে আদালত আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের করা আবেদন নাকচ করে দেন।

মফিজুল হক আরও বলেন, আজ যে দুজনের জামিনের শুনানি ছিল, তাঁদের আইনজীবীও আসেননি। আদালত ২ জানুয়ারি তাঁদের জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, শুনানিতে প্রায় আড়াই শ আইনজীবী অংশ নেন। আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে আদেশ দেওয়া হলে আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে যান। ওই সময় তাঁরা আদালতকে বলেন, ওকালতনামা ছাড়া শুনানি করা আইনে বিধান নেই। তখন আদালত বলেন, জামিন আবেদন শুনানির অনুমতি দেওয়া হয়নি, তা নামঞ্জুর করা হয়েছে। একপর্যায়ে বিচারক বিব্রত হয়ে এজলাস থেকে নেমে খাসকামরায় চলে যান। পরে দুপুরে বিচারক আবার এজলাসে ওঠেন।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের সভাপতি রবীন্দ্র ঘোষ আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার কারণে চিন্ময়ের আইনজীবী ৩ ডিসেম্বর শুনানিতে অংশ নিতে পারেননি। এ জন্য আজ আগাম জামিন শুনানির আবেদন করা হয়। কিন্তু আইনজীবীদের বাধার মুখে আদালত তা নাকচ করে দেন।

রবীন্দ্র ঘোষ দাবি করেন, মক্কেলের ওকালতনামা ছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে তিনি মামলা লড়তে পারেন। তাঁকে লড়তে মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মক্কেলের ওকালতনামা কিংবা যে আইনজীবীকে মক্কেল ওকালতনামা দিয়েছেন, সেই আইনজীবী উপস্থিত থেকে অন্য যেকোনো আইনজীবীকে শুনানিতে আনতে পারেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আসা কোনো আইনজীবীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে কিংবা বাধা দেওয়া হচ্ছে, এ রকম কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।’

চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। ২ ডিসেম্বর পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামির জন্য ওকালতনামা দিলে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব; আর তাঁকে পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ২৫ থেকে ৩০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী।