এমন একটা রাত কাটাতে হবে, তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। গতকাল শুক্রবার টান টান উত্তেজনায় কেটেছিল। যেন কোনো সিনেমার ক্লাইমেক্স। তবে মোটেও তা রুপালি পর্দার নয়, বাস্তবের এক রুদ্ধশ্বাস গল্পের সাক্ষী হয়ে রইলেন ভারতের আপামর জনতা। আল্লু অর্জুনকে জেলে কাটাতে হলো রাত!
গতকাল দিনভর আল্লু অর্জুনের গ্রেপ্তারি, ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় বন্দী, তারপর জামিন নিয়ে নানান নাটকীয় ঘটনা ঘটে গেছে। তবে জামিন পেয়েও রাতভর জেলেই কাটাতে হয়েছে রুপালি পর্দার ‘পুষ্পা রাজ’-কে। সন্ধ্যা থিয়েটারে ‘পুষ্পা ২’ ছবির প্রিমিয়ারে এক নারীর মৃত্যুর অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে আল্লুর নাম উঠে এসেছে।\
‘এ ঘটনায় আমার কোনো দোষ ছিল না। আমি আইনকে সম্মান করি। আমি একজন সচেতন নাগরিক। এ ঘটনায় আমি আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব’, আজ শনিবার সকালে জেল থেকে বের হয়ে আল্লু অর্জুন সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন। আজ সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ চাঞ্চলগুডা কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনের ফটক দিয়ে আল্লুকে বের করা হয়। এই দক্ষিণি তারকার বাবা ও শ্বশুর তাঁকে জেল থেকে আনতে গিয়েছিলেন।
জেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আল্লু অর্জুন। এরপর তিনি যান হায়দরাবাদের গীতা আর্টসে। এখানে দক্ষিণি ছায়াছবির দুনিয়ার কিছু ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অভিনেতা দেখা করেন। এখানে অপেক্ষায় ছিলেন ‘পুষ্পা’-র পরিচালক সুকুমার। তাঁকে দেখেই আল্লু আলিঙ্গন করেছিলেন। সুকুমার এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর আল্লু অর্জুন সোজা চলে যান নিজের বাড়িতে। বাড়িতে সবাই তাঁর অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে ছিলেন।
বাড়িতে পা রেখেই আল্লু তাঁর মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। তার আগে গেটে অভিনেতাকে দক্ষিণ ভারতীয় রীতিতে আরতি করে, নারকেল ফাটিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল। আল্লুকে দেখে ছুটে আসেন তাঁর স্ত্রী স্নেহা রেড্ডি আর ছেলে-মেয়ে। স্নেহা বুকে জড়িয়ে ধরেন আল্লুকে। এ সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন আল্লু ও স্নেহা। এরপর ছেলে-মেয়েকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন অভিনেতা। তবে গতকাল বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আজ বাড়ি ফেরা পর্যন্ত আল্লু ‘ফায়ার’ নয়, শান্ত রূপেই ধরা দিয়েছেন।
হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রিমিয়ারে পদপিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যুর সঙ্গে প্যান ইন্ডিয়া তারকা আল্লু অর্জুনের নাম উঠে আসে। কারণ, ৪ ডিসেম্বর রাতে সন্ধ্যা থিয়েটারে হঠাৎই আল্লু তাঁর নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। ভিড়ে ঠাসা সন্ধ্যা থিয়েটারে আল্লুকে সামনে থেকে দেখে দর্শক উন্মাদ হয়ে যান, এর জেরে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ৩৫ বছরের রেবতী। আর তাঁর ১৩ বছরের ছেলে এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল। রেবতীর ছেলে শ্রীতেজ এখনো চিকিৎসাধীন।
ভেন্টিলেশনে আছে সে। রেবতীর পরিবার আল্লু অর্জুন, তাঁর নিরাপত্তাকর্মী এবং সন্ধ্যা থিয়েটারের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। আর সেই মামলার ভিত্তিতে গতকাল দুপুর ১২টা নাগাদ আল্লুকে তাঁর জুবিলি হিলসের বাংলো থেকে গ্রেপ্তার করেছিল হায়দরাবাদ পুলিশ।
এরপর তাঁকে চিক্কদপল্লি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিকেল চারটা নাগাদ নিম্ন আদালতে পেশ করা হয় এই দক্ষিণি তারকাকে। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লু এই গ্রেপ্তারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তেলাঙ্গানা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তেলাঙ্গানা আদালত অভিনেতাকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছেন। উচ্চ আদালত এই মামলার আগামী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি।