সোমবার   ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪   ৯  পৌষ  ১৪৩১


রাজশাহীতে অটোরিকশা স্ট্যান্ডে বাস শ্রমিকদের হামলা, ৭০ গাড়ি ভাঙচুর

MD. Sayem Uddin

Updated 24-Dec-17 /   |   স্টাফ রিপোর্টর   Read : 24
সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে বাস শ্রমিকদের হামলা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে বাস শ্রমিকদের হামলা।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর রেলগেইট এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এ সময় বাস শ্রমিকেরা ৭০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের কাঁচ ভেঙে দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে অটোরিকশাচালকদের দাবি, প্রায় ৯০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। যাত্রী-চালকসহ ৪০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে জেলার তানোর উপজেলা সদরে অটোরিকশাচালকরা বাসের ছয়জন চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে আহত করে। এর জের ধরে দুপুরে রাজশাহী শহর থেকে সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। এদিন বিক্ষুব্ধ বাস শ্রমিকেরা শহরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা শহরের রেলগেইট এলাকার সিএনজি স্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধায় তারা ফিরে আসে। সোমবারের পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী শহর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে বাস শ্রমিকেরা হাতুড়ি ও লাঠিসোটা নিয়ে রেলগেইট এলাকায় এসে বেপরোয়াভাবে অটোরিকশা ভাঙচুর করতে শুরু করে। এ সময় বাধা দিতে গেলে অটোরিকশাচালক ও যাত্রীদের পিটিয়ে আহত করা হয়। ভাঙচুর শেষে বাস শ্রমিকেরা চলে গেলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে।

এদিকে রাজশাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৯০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। কমপক্ষে ৪০ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এদের বেশিরভাগই চালক। অন্যরা অটোরিকশার যাত্রী। তাদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও আছেন।

তিনি আরও বলেন, আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ এসে সবই দেখেছে। আমরা মামলা করব। এখন মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমাদের ডেকেছেন। আমরা কথা বলতে যাচ্ছি।

অন্যদিকে রাজশাহী মোটর (বাস) শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিক আলী পাখির মোবাইল মঙ্গলবার বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে সোমবার তিনি বলেন, অটোরিকশা চালকরা আমাদের বাসের শ্রমিকদের প্রায়ই মারধর করে। এতে বাস শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার বাস বন্ধ করে দেয়।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পুলিশ কমিশনারের কাছে এসেছি। কথা বলছি। সাংবাদিকের সঙ্গে পরে কথা বলব।’

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙচুর করা ৩২টি গাড়ি পেয়েছি। ততক্ষণে কিছু গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী ও চালক মিলিয়ে ১২ জনকে মারধর করা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা ভুক্তভোগীদের মামলা করতে বলেছি। তারা মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক এবং বাসের শ্রমিকদের চলমান দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। বাস শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা স্ট্যান্ড শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে আসছে। মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ছোটখাটো সংঘাত লেগেই থাকছে।

অন্যদিকে সিএনজি চালকেরা সুযোগ পেলেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাস চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের পিটিয়ে আহত করছে। কোথাও মারধরের ঘটনা ঘটলেই বাস চালকেরা গাড়ি বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায়। তবে অটোরিকশাচালকেরা বাস শ্রমিকদের মতো অতটা সংঘবদ্ধ নয়।

তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বাস শ্রমিক ও অটোরিকশাচালকদের সমস্যা পুরনো। এরা শহরে গেলে তাদের অটোরিকশা আটকায়। এরা তখন তানোরে বাসের চালক-হেলপারদের দাপট দেখায়। এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।

ওসি আরও জানান, সোমবার ছয়জন বাস শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় রাতে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে আসামি হিসেবে ১৮ জন সিএনজি চালকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও আসামি আছে। মামলার পর এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।