বৃহস্পতিবার   ডিসেম্বর ২৬ ২০২৪   ১২  পৌষ  ১৪৩১


আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছ: সাইফুল আলম মাসুদ(এস আলম)

Mohammad Obaidullah Chowdhury

Updated 24-Dec-25 /   |   চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি   Read : 17
ছবি
ছবি

বাংলাদেশের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের (এস আলম) সম্পদ জব্দ করায় বিনিয়োগে যে ক্ষতি হয়েছে, তা আদায়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ওই পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। 

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার ওই ব্যবসায়ীর যাবতীয় সম্পত্তি জব্দ করায় বিনিয়োগক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। 

ইউনূস সরকারে তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন সরকারের ঘনিষ্ঠরা। এই সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূস।

তবে তিনিসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে সাইফুল আলমের আইনজীবীরা জানান, ছয় মাসের মধ্যে দুই পক্ষের (সরকার ও এস আলম) মধ্যে সমঝোতা না হলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হবেন তারা।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তার সম্পদ জব্দ ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করছে বলে দাবি করেছেন সাইফুল আলম। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও একাধিক উপদেষ্টার কাছে ‘বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিশ’ পাঠিয়েছেন তিনি। সেই নোটিশে ছয় মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলে দাবি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে এস আলমের আইনি পদক্ষেপের ঘটনায় সেই টাকা ফেরত আনার প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে।

আইনজীবীদের নোটিশে বলা হয়েছে, ক্ষতি আদায়ে সাইফুল আলম আন্তর্জাতিক আইনি প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। তবে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নন, সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে তিনি এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। 

২০০৪ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির ভিত্তিতে মামলা সাজানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলমের আইনজীবীরা।

গত ১৮ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টাসহ কয়েকজন উপদেষ্টাকে পাঠানো নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২০১১ সালে আলম পরিবার সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেয়। ২০২০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন তারা।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলমের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল অ্যান্ড সালিভানের আইনজীবীরা এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ওই নোটিশের কপি পেয়েছে।

এ বিষয়ে এস আলমের আইনজীবী কুইন ইমানুয়েল জানান, সাইফুল আলমের ব্যাংক হিসাব জব্দের পাশাপাশি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

বর্তমান সরকারের তৎপরতায় এস আলম গ্রুপের মালিকানাও খুইয়েছেন তিনি।
এদিকে আলম পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশন।

এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঋণ-সম্পর্কিত কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি ‘নির্বিচারে ও কোনো নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না মেনেই’ বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয় চিঠিতে।

নোটিশে ইমানুয়েল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিনিয়োগকারীদের অর্থের অবমূল্যায়ন করেছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ চুক্তি লঙ্ঘন হয়েছে। বিনিয়োগকারীর অধিকার হরণ করা হচ্ছে। ফলে চলমান দ্বন্দ্ব এভাবে আরও বাড়ছে।’

তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো মন্তব্য করেনি বলে জানায় ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। 

গত অক্টোবরে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, সাবেক সরকারের আমলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে সাইফুল আলম ও তার মদদপুষ্টরা ব্যাংক খাতে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এস আলম গ্রুপ অবৈধ উপায়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর ব্যাংক ডাকাতি।’ তবে মনসুরের মন্তব্যের ‘সত্যতা নেই’ বলে জানিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

ওই সাক্ষাৎকারের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে দাবি করে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ‘ভীতি প্রদর্শনমূলক ব্যবস্থা’ নিচ্ছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তির আলোকে তার সুরক্ষা প্রাপ্য।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন মন্তব্য করতে চায় না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, চলমান তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হলে মন্তব্য না করাই ভালো।