নং পাড়ইল ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামালকে দুর্নীতির অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলে, তার স্থলে জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চুকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার। ২০১৬ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ০৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
স্বল্প মেয়াদেই অনাস্থার মুখে পড়েন জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চু।
বাচ্চুর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ইউপি সদস্যগণ তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার স্বল্প সময়ের দায়িত্বকালেও অভিযোগ ওঠে, তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কাজ পরিচালনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার প্রতি আস্থা হারান।
আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে?
সম্প্রতি জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চু উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ২ পদে নিযুক্ত হয়েছেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, যে ব্যক্তি এক সময় আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তিনি কীভাবে নিয়ামতপুর উপজেলার বিএনপির সেক্রেটারি মোস্তাফিজুরের সঙ্গে আপোস হলেন—এটি নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চু আওয়ামী লীগের ছায়ায় থেকে বিভিন্ন সময় সুবিধা নিয়েছেন। । এবং বিএনপির অভ্যন্তরে থেকেই আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছেন।
বিএনপির নেতৃত্ব কি জানতো?
বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্ব জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চুর অতীত সম্পর্কে অবগত ছিল বলেই জানা গেছে। তবে, তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করছেন, এটি অভ্যন্তরীণ জেলা পর্যায়ের রাজনীতির জটিল সমীকরণের ফলাফল। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সুবিধাবাদীদের প্রভাব, এবং রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই হয়তো জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চু দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন হতে পেরেছেন।
জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চুর মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে বিএনপি'র এমপি পদে মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুরের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তা নিয়ে নিয়ামতপুর উপজেলার স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অনেকে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। এতে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ছত্রছায়ায় জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চুর অবস্থান।
জানা গিয়েছে, এমপি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের ছত্রছায়ায় অবস্থান নিয়েছেন ৬ নং পানেল ইউনিয়নের সাবেক জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চু চেয়ারম্যান। এতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যই বিএনপির অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন এবং এখন নতুন প্রভাবশালী নেতার ছায়ায় নিজের অবস্থান শক্তিশালী করছেন।
রাজনীতির মাঠে সুবিধাবাদী নেতাদের পদোন্নতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে, যা ভবিষ্যতে দলের জন্য বিপদজনক হতে পারে। এখন দেখার বিষয়,বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপি'র ঢাকা কেন্দ্রীয় অফিস এবং নওগাঁ জেলার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব রত কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলার বিএনপি এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয় এবং জাহাঙ্গীর কবির বাচ্চুর মতো বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়। তবে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগে যোগদান করা কোনো ব্যক্তি বিএনপিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। যদি কেউ এমনটি করে থাকে বা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ তাকে আশ্রয়দানকারী নেতাকেও বহিষ্কার করা হবে। এই নীতির পরিপ্রেক্ষিতে, বাচ্চুর অন্তর্ভুক্তি এবং তার আশ্রয়দাতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।