রবিবার   অক্টোবর ২৬ ২০২৫   ১১  কার্তিক  ১৪৩২


আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ পিওর আর্থ ইউনিসেফ চট্টগ্রাম ইয়ুথনেট

Mohammad Obaidullah Chowdhury

Updated 25-Oct-26 /   |   চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি   Read : 18
ছবি
ছবি

বাংলাদেশে কোনও মাত্রাই নিরাপদ নয়, সিসা দূষণ বন্ধে কাজ করার এখনই সময়’  এই প্রতিপাদ্য নিয়ে “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৫” উপলক্ষে চট্টগ্রামে জনসচেতনতামূলক র‍্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ইয়ুথনেট গ্লোবাল ও পিওর আর্থ বাংলাদেশ, ইউনিসেফের সহায়তায়।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় জামালখান প্রেসক্লাব চত্বর থেকে র‍্যালিটি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জামালখান মোড়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে ইয়ুথনেট গ্লোবালের স্বেচ্ছাসেবী, পিওর আর্থ ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সুশীল সমাজের সদস্য, পরিবেশ অধিকারকর্মী, নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রায় ৩০ জন অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারীরা হাতে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে “সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে” ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন এলাকাটি। কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল—সিসা দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকার ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আইনের কার্যকর প্রয়োগ ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো। এসময় উপস্থিতদের মাঝে সিসা দূষণবিষয়ক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।

জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর উদ্যোগে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ” বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এবছর ১৯ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত পালিত ত্রয়োদশ সপ্তাহের ইংরেজি প্রতিপাদ্য— “No Safe Level: Act Now to End Lead Exposure”।

বিশ্বের সবচেয়ে সিসা দূষিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু, অর্থাৎ ৬০ শতাংশেরও বেশি শিশু, রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা বহন করছে। সিসা বিষক্রিয়ায় শিশুদের বুদ্ধিবিকাশে প্রতিবন্ধকতা, মনোযোগের অভাব, আচরণগত সমস্যা এবং পরবর্তীতে অপরাধ প্রবণতা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগ, গর্ভপাত এবং মৃত সন্তান প্রসবের ঝুঁকিও বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, বুদ্ধিমত্তা হ্রাস ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুজনিত কারণে বাংলাদেশের বাৎসরিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ৬ থেকে ৯ শতাংশ ঘাটতি সৃষ্টি করে।

দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্য যেমন দেয়ালের রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসনপত্র, মসলা, শিশুদের খেলনা, প্রসাধনী, এমনকি মাছের খাদ্যেও সিসা মিশে থাকে। তাছাড়া, অনিরাপদভাবে সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি ভাঙা ও রিসাইক্লিং করার ফলে সিসা মাটি, পানি ও বায়ুতে ছড়িয়ে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যাটারি অনিরাপদভাবে রিসাইক্লিং করা হয়।

পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিতালী দাশ বলেন,“আমাদের মাটি, পানি ও বায়ু সিসা দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এই দূষণ বন্ধে গণসচেতনতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্যে সিসার মান নির্ধারণ, অবৈধ ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ এবং কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।”

ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন,সিসা দূষণ আমাদের শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কিন্তু তা প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি শিশুরই নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। যুবসমাজের নেতৃত্বে আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি।

ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন,সিসা দূষণ আমাদের শিশুদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কিন্তু এটি প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি শিশুরই নিরাপদ ও দূষণমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার আছে। যুবসমাজের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়িয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব।

ইয়ুথনেট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক পপি আক্তার সিসা দূষণ রোধে দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন কামাল উদ্দিন সি এস বি, যিনি সকলকে সিসা দূষণ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।