জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ইউপিডিএফের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের শুরুতে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের সংগঠক মাইকেল চাকমা তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব দাবির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন।
রবিবার(১১ মে), সকাল ১০ঘটিকায় বান্দরবান প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা শাখার আয়োজনে এই প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র পরিষদের বক্তারা নানা বিষয় তুলে ধরেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি, আসিফ ইকবাল জানান জাতীয় গত শনিবার সংসদ ভবনে ইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয় এবং বৈঠকের শুরুতে ইউপিডিএফ এর সংগঠক মাইকেল চাকমা তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল করার প্রস্তাব করেন, যা সংবিধান ও দেশদ্রোহীতার শামিল ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ এর তীব্র নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানায়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে, তা কোনো অবস্থাতেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। বিশেষত, আলী রিয়াজের নেতৃত্বে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর সঙ্গে আজ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর আলোচনার পর, পুরো পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। কমিশন কি সত্যিই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে, নাকি সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক বৈধতা দিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ করে দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে? ইউপিডিএফ, একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যার শেকড় রয়েছে অত্যাচার, হত্যাকাণ্ড, অপহরণ এবং চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে, সেই দলটিকে এখন রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে? দলটির অন্যতম নেতা মাইকেল চাকমা, যার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তবে সে এখন গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে, সত্যিই একজন সন্ত্রাসী নেতা গণতন্ত্রের প্রচারক হতে পারে? তারা মূলত পূর্ব তিমুর গড়ার স্বপ্নে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন দিলে এই ভূখণ্ড বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে। এর আগে ১৯৭০ সালে এম এন লারমা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বায়ত্তশাসন ও পৃথক আইন পরিষদের দাবি তুলে। এরপর ৭২ সালে মানবেন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা অর্থাৎ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গডফাদার সন্ত লারমা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়। শহিদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াকে’ও বেশ কয়েকবার স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠনগুলোর নেতারা। তবে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে কেউ’ই এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখানে মাইকেল চাকমার বক্তব্য তুলে ধরার পর, একটি গভীর প্রশ্ন উঠে আসে: এই সমস্ত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দলের সদস্যদের কি রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়া উচিত? মাইকেল চাকমা তাঁর বক্তব্যে দাবি করেছেন যে ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে। কিন্তু তাদের অতীত এবং বর্তমান কার্যক্রম বলছে কিছুই পরিবর্তিত হয়নি। তাদের নেতৃত্বে যে আন্দোলনগুলো হয়েছিল, তা দেশের জাতীয় স্বার্থের বিপক্ষে। যেমন, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের মিছিল, সভা ও কর্মসূচি চালিয়েছিল, যা দেশের বৃহত্তর জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি’ ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সময়েও তারা কোটার পক্ষে অংশগ্রহণ করেছিল, যা সামাজিক অস্থিরতা ও দেশব্যাপী ক্ষতির কারণ হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র ইন্সার্জেন্সী এরিয়া। এখানে স্বায়ত্তশাসন দেয়া মানেই এই ভূখণ্ডে রক্তপাত ও উক্তেজনা আরও বাড়বে এবং ৩ পার্বত্য জেলা হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনিতেও ১৯০০ সালের ব্রিটিশ শাসন বিধি বাতিল না হওয়ায় বাঙ্গালিরা ভূমি গ্রহণের অধিকার সহ নানান মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ অবধি পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর গুলিতে ১ হাজারের উপরে সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছে এই ভূমিতে। এছাড়াও নিরপরাধ পাহাড়ি-বাঙালি খুন, হত্যা ও গুমের স্বীকার হয়েছে ৩০ হাজারেরও অধিক। এই অঞ্চলে যদি স্বায়ত্তশাসন দেওয়া দেওয়া হয় তাহলে শহিদ সকল সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিহত আহত সাধারণ জনগণের সাথে উপহাস করার শামিল হবে। ছাত্র পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত লিফলেটে তুলে ধরা হয় জাতীয় সংসদে এলডি হলে মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল জাতীয় ঐক্যক, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফের সদস্য সুনয়ন চাকমা। যারা প্রত্যেকে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) এর নেতা। সংবাদ সম্মেলনে আফিস ইকবাল ইউপিডিএফ এর উদ্দেশ্যে বলেন তারা যদি এমন জঘন্য প্রস্বাবের জন্য ক্ষমা না চাই তাহলে আমার পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো। দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা মেনে নিব না।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তার ব্যক্তবে ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর হাতে পাহাড়ের নিপীড়িত, নির্যাতিত বিভিন্ন গণহত্যায় আহত ও নিহত স্বজনদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ সরকারের কাছে নিম্নে উল্লিখিত দাবি-দাওয়া পেশ করেন, (১) ইউপিডিএফ, জেএসএস ও কে এন এফ সহ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। (২) দেশদ্রোহী মাইকেল চাকমা, সন্ত লারমা, দেবাশীষ রায় সহ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সকল গডফাদারদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। (৩) অখণ্ডতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে পাহাড়ে সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করতে হবে। পুলিশ ও এপিবিএন’কে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামাদি দি সেনাক্যাম্পের পাশাপাশি কিছু পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। (৪) সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধে নতুন করে বেশ কিছু বিজিবি’র বিওপি স্থাপন করতে হবে। (৫) পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখতে ১৯০০ সালের শাসন বিধি বাতিল করে বৈষম্যহীন পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি জমির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তানিবির হোসেন ইমন,সুয়ালক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সুমন ও ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।