মঙ্গলবার   মে ১৩ ২০২৫   ৩০  বৈশাখ  ১৪৩২


যুদ্ধের মুখ থেকে ফিরে: ভারত-পাকিস্তান ১৯ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ।

সৈয়দ সালেহ উদ্দিন

Updated 25-May-12 /   |   News reporter   Read : 35
যুদ্ধের মুখ থেকে ফিরে: ভারত-পাকিস্তান ১৯ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ।
যুদ্ধের মুখ থেকে ফিরে: ভারত-পাকিস্তান ১৯ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ।

ভারত-পাকিস্তান ১৯ দিনের সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বন্ধ হলো রক্তক্ষয়ী উত্তেজনা

দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯ দিনব্যাপী চলা সংঘাত অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি মধ্যস্থতায় ১০ মে (শনিবার) বিকেল ৫টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে দুই দেশ ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সংকট সমাধানে আলোচনায় বসতেও সম্মত হয়েছে।

এই যুদ্ধবিরতি কেবল একটি সামরিক বিরতি নয়, বরং উপমহাদেশে সম্ভাব্য একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বার থেকে ফিরে আসার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মাইলফলক বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

সংঘাতের শুরু: একটি হামলা থেকে সামরিক উত্তেজনা

২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। দিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনার পাশাপাশি সীমান্ত বন্ধ করে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। যদিও পাকিস্তান সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে।

পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক অভিযান

পরের দিন দুই দেশ একে অন্যের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে এবং আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তান নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারতীয় বিমান সংস্থার ওপর, ভারতও পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে।
এসময় সীমান্তে একাধিক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ভারত জানায়, নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LoC) পাকিস্তানি সেনাদের গুলির জবাবে তারা পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় গোলাগুলি হঠাৎ বেড়ে যায়।

ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন যুদ্ধ

৩ মে থেকে শুরু হয় উচ্চ পর্যায়ের সামরিক প্রদর্শনী। পাকিস্তান আবদালি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরে ৫ মে ফাতাহ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত সামরিক সরঞ্জাম ও বিমান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে।
৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নাম দিয়ে আজাদ কাশ্মীরে ৯টি স্থানে আক্রমণ চালায়, যার মধ্যে দুটি মসজিদও ছিল। পাকিস্তানের তথ্যমতে, এতে শিশু ও নারীসহ ৩১ জন নিহত হয়। পাল্টা প্রতিশোধের ঘোষণা দেয় ইসলামাবাদ এবং দাবি করে, তারা ভারতের ৫টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তানি গোলার আঘাতে ১৬ ভারতীয় সেনা নিহত হয়।

৮ মে দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলার অভিযোগ আনে। ভারত ইসরায়েলি ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালায়, পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দেয়। উভয় পক্ষই দাবি করে যে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

খেলাধুলার ময়দানেও প্রভাব

৯ মে ভারতের জনপ্রিয় আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়। একই দিনে রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামের বাইরে ড্রোন হামলায় পিএসএলের ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায় এবং পরে টুর্নামেন্টটিও স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ বাড়তে থাকে, জি-৭ দেশগুলো উভয় পক্ষকে “সর্বোচ্চ সংযম” অবলম্বনের আহ্বান জানায়।

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে

১০ মে পাকিস্তান অভিযোগ করে, ভারত একাধিক বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ চালায়, যেখানে ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করার দাবি করা হয়। একই হামলায় নিহত হন কাশ্মীরের ডেপুটি কমিশনার ও একজন সেনা সদস্য।

এই অবস্থায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়তে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হয় সরাসরি আলোচনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো আন্তোনিও রুবিও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনে কথা বলেন। এরই ফলস্বরূপ ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:

এই যুদ্ধবিরতি ক্ষণস্থায়ী হলেও তা শান্তির সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। উভয় দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন চায়, এই আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক।