সোমবার   ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪   ৮  পৌষ  ১৪৩১


মাঝরাতে ছিনতাইকারীদের মুখোমুখি তাসরিফ, তারপর যা ঘটল

MD. Sayem Uddin

Updated 24-Dec-19 /   |   স্টাফ রিপোর্টর   Read : 33
মাঝরাতে ঢাকার রাস্তায় কয়েকজন ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হয়েছেন সংগীতশিল্পী তসরিফ খান। তবে কবলে পড়েননি গায়ক। বরং তিনি এগিয়ে আসায় ছিনতাইকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হয়েছেন এক ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন তাসরিফ।
মাঝরাতে ঢাকার রাস্তায় কয়েকজন ছিনতাইকারীর মুখোমুখি হয়েছেন সংগীতশিল্পী তসরিফ খান। তবে কবলে পড়েননি গায়ক। বরং তিনি এগিয়ে আসায় ছিনতাইকারীদের কবল থেকে উদ্ধার হয়েছেন এক ব্যক্তি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছেন তাসরিফ।

গতকাল ১৮ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটেছে জানিয়ে রাতের ঢাকায় সাবধানে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এই গায়ক।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুকে গতরাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাসরিফ খান লিখেছেন, ‘১৮ তারিখ দিবাগত রাত ২ টার ঘটনা। মিরপুর ২ নাম্বার একটা প্র্যাক্টিস প্যাড থেকে জ্যামিং শেষ করে আমরা কুড়েঘর ব্যান্ডের প্রায় সবাই খাবার হোটেলের দিকে যাচ্ছিলাম। মিরপুর ২ নাম্বার ওভারব্রিজের পাশে, পেট্রোলপাম্পের ঠিক সামনে খেয়াল করলাম ৫-৬ জন মিলে এক লোককে ধস্তাধস্তি করছে। লোকটা খালি গায়ে কোনোরকম ছুটে যাবার চেষ্টায় ‘কেউ বাঁচান ভাই’ বলে চিৎকার করছে।’

এই গায়ক লিখেছেন, ‘ব্যান্ডের ৩ জন একসাথে ছিলাম আর বাকিরা সামনে পেছনে মিলিয়ে। আমি এগিয়ে গিয়ে গলা মোটা করে কী সমস্যা জিজ্ঞেস করে থামতে বলার সাথে সাথে খালি গায়ের লোকটা কোনোরকম ছুটে দৌড় দেয় আর ওই ৫-৬ জন আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। কোনকিছু অনুমান করার আগেই ওরা আমাদের কাছে এসে বিচারের স্বরে বলে, ‘ভাই ওইডা মাদক ব্যবসায়ী’।’

পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাসরিফ লিখেছেন, ‘আমি এই কথায় কয়েক মুহূর্তের জন্য কনফিউজড হয়ে যাই। আসলেই পালানো লোকটা মাদক ব্যবসায়ী নাকি এদের নিজেদের কোনো ঝামেলা নাকি এরা ছিনতাই করছিল ভাবতে ভাবতে আরও কয়েক কদম এগিয়ে যাই। ওই খালি গায়ে লোকটা যেদিকে দৌড়াল সেদিকে। খেয়াল করলাম খালি গায়ের লোকটা আসলে পালায়নি। থানা একেবারে পাশে থাকায় লোকটি থানার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে পুলিশকে জানানোর চেষ্টা করছে।’

তাসরিফ আরও লিখেছেন, ‘ঘটনা বুঝতে আর বাকি রইলো না। পেছন ফিরে দেখি ওরা তড়িৎ গতিতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। সামনে যে বসা তার হাতে টিপ চাকু। মাথায় এলো এরা যখন কাছে এসেছিল তখন এদের কয়েকজনের এক হাত গায়ের পেছনে লুকানো ছিল। তার মানে এদের প্রায় সবার কাছেই ধারালো অস্ত্র কিংবা চাকু ছিল। গাড়িটা টান দেওয়ার সাথে সাথে একটা ছবি তুললাম যেন নাম্বার প্লেটটা পড়া যায়। গাড়ির ছবিটা লাইভ মুড হওয়ায় ছবিটা ঝাঁপসা হয়েছে কিন্তু নাম্বার বোঝা যায়। ‘ঢাকা মেট্রো - গ ২৫৪৬৩৩।

তাসরিফ আরও লিখেছেন, ‘লোকটা দৌড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে কান্নার স্বরে বলল, ভাই আপনেরা আগায় না আইলে আমারে মাইরলতো ওরা। ওরা পালানোর পর এবার একটু ভিড় বাড়ল যে ভিড়টা ছিনতাইয়ের সময়ে হলে হয়তো এই ছিনতাইকারীরা এত্ত সাহস পেত না। তৎক্ষণাৎ থানায় গিয়ে ওয়ারলেস অপারেটরকে এই গাড়ির নাম্বার জানালাম এবং ওসি তদন্ত যিনি ছিলেন তাকেও গাড়ির নাম্বার দিলাম। ওনারা বললেন, ধরার চেষ্টা করবেন এবং দুইজন এসআইকেও দেখলাম সিভিল ড্রেসে একটু তৎপরতার সাথে বলছিল এদেরকে তারা ধরবে।

তাসরিফ খান আরও লিখেছেন, ‘অদ্ভুত ব্যাপার হলো খাবার খাওয়া শেষ করে যখন আমাদের ড্রামার শান্ত রিকশা করে ওর বাসায় ফিরছিল তখন ওই গাড়িকে মিরপুর ১০ আল হেলালের পাশের সিএনজি পাম্পে স্টার্ট করা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার আমাকে কল দিয়ে জানায়। আমি কল দিয়ে থানার এসআইকে জানাই। এসআই ভাইজান আমাকে কিছুক্ষণ পর কল করে জানান ওনারা লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু গাড়িটা হয়তো ততক্ষণে ওই জায়গা ত্যাগ করেছে।’

এই গায়ক বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে ঢাকায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সিসিটিভি আছে, পুলিশের কাছে গাড়ির নাম্বার আছে এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট ও রয়েছে তারপরও আমি জানি না এই গাড়ি এখনও আটক হয়েছে কিনা অথবা কেন এখনও এই গাড়িটা কিংবা ওই সন্ত্রাসীদের ধরা গেল না। এদের হাতে যদি আল্লাহ না করুক, কেউ খুন হয় কিংবা আমার আপনার পরিবার বড় বিপদে পড়ে তবে এই দায়ভারটা নেবে কে।’

সবশেষে তাসরিফ লিখেছেন, ‘কী হবে জানি না তবে নিজের ও নিজের পরিবারকে সাবধান করুন, সতর্ক করুন। রাতে একা চলাচল থেকে বিরত থাকুন। এইসব আজন্ম সাফারিংসগুলো বোধহয় আমরা কপালে করে লিখিয়ে নিয়েই এসেছিলাম যেগুলা প্রতিনিয়ত আমাদের মেনে নিতে হয় কিংবা সামনেও আরও মেনে নিতে হবে।’

সংগীতের পাশাপাশি মানবিক কাজে সামনে থাকেন তাসরিফ। ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও। গানে গানে ছাত্রজনতাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।