গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, এই লঘুচাপের কারণে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং চট্টগ্রাম দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আর এমন অবস্থার অবসান ঘটবে আগামীকাল সোমবার। এ কে এম নাজমুল হক জানান, আজ শনিবার পরিবেশ মেঘাচ্ছন্নই থাকবে। রোববার ঢাকাসহ উত্তর অঞ্চলে কিছুটা সূর্যের দেখা পাওয়া যাবে। তবে সকালের দিকে না হলেও দুপুরের পর সূর্যের দেখা মিলতে পারে। আর পরিবেশের এমন গুমোট অবস্থার অবসান ঘটবে আগামীকাল। শিগগিরই ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে শৈত্যপ্রবাহের কোনো সম্ভাবনাও নেই।
বরিশালে থেমে থেমে বৃষ্টি, জেঁকে বসেছে শীত
বরিশাল অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পাবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিস। এছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় জেঁকে বসেছে শীত, শীত বাড়ার কারণে নগরীতে শীতের পোশাক বিক্রি বেড়ে গেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস উচ্চ পর্যবেক্ষক মো. মাসুদ রানা রুবেল জানান, শুক্রবার রাত ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত হালকা ধরনের বৃষ্টিপাত হয় প্রথমে। এরপর রাত ৩টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বরিশাল বিভাগের সব জায়গায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ২.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত হওয়া এ বৃষ্টি সামনে আরও দুই-এক দিন হতে পারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি চলমান থাকলে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পাবে এবং বৃষ্টি বন্ধ থাকলে ভোররাতে কুয়াশা পড়বে। সেক্ষেত্রে দৃষ্টিসীমা ৫০০ থেকে ১ হাজার মিটারের মধ্যে চলে আসবে। আর বৃষ্টি হলে কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শীত। আর শীত বাড়ার করণে নগরীতে শীতের পোশাক কেনার চাপ বেড়ে গেছে। নগরীর অধিকাংশ মার্কেটে দেখা গেছে শীতবস্ত্র কেনার জন্য ক্রেতা। শীত পোশাক কিনতে আসা মরিয়ম বেগম জানান, হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় বাচ্চাদের জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসছি। যদিও শীত পোশাক আছে তবে নতুন করে আবার নিতে আসছি কারণ আগের গুলো একটু পুরোনো হয়ে গেছে, তাই নতুন করে কিনতে আসলাম। আর দিনমজুর মো. বাবুল হাওলাদার জানান, ‘সকালে ভ্যান নিয়ে পেঁয়াজপট্টি আসছি ট্রিপের আশায় কিন্তু সকাল ৯টার দিকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ভ্যান চালানো বন্ধ করছি, মাত্র ২০০ টাকার মতো ইনকাম করছি। এ দিয়া নিজে কী খাব আর বাসার বাজারও বা কী করব। আবার এ বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরও হতে পারে, তখন আবার ওষুধ কিনতে হবে সেটাকা আবার কই পাব।
বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ তেমন একটা বাইরে বের হচ্ছেন না। স্বাভাবিক সময়ে যানজটের রাস্তাগুলো আজ অনায়াশে পার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে মহাসড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে পরিবহন চালকদের। এরই মধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরের ইচলাদিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাকুরা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বাসের সামনের অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এর আগে সকালে মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ধীরগতির কারণে সেখানেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অপরদিকে এ মাত্রার বৃষ্টিতে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) বরিশালের উপ-পরিচালক মো. মুরাদুল হাসান। তিনি জানান, মাঠে থাকা আমন ধান ৮০ শতাংশ কাটা হয়েছে। আর থেমে থেমে বৃষ্টি সরিষার বেলায় প্রভাব ফেলবে না। তবে এমন বৃষ্টি শাকসবজির জন্য বেশ উপকারী।
বাগেরহাটে বৃষ্টিতে বিপাকে সাধারণ মানুষ
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, পশ্চিম ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বাগেরহাটে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকেই শুরু হয়েছে থেমে থেমে বৃষ্টি। গতকাল শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মসহ জীবনযাত্রা দারুন ভাবে ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টিতে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। এদিকে নিম্নচাপের কারণে সাগরে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ায় টিকতে না পেরে ফিশিং ট্রলারগুলো উপকূলের মৎস্য বন্দরসহ সুন্দরবনের নদী খালে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে শুরু করেছে। তবে, এই অবস্থার মধ্যেও মোংলা বন্দরে অবস্থানরত ১৫টি বিদেশি জাহাজ থেকেই পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেও বাগেরহাটসহ উপকূল জুড়ে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন মোংলা আবহাওয়া অফিস। বাগেরহাটে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শহরের প্রধান বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় শাকসবজিসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও বিপাকে পড়েছেন।